শুধু নাটক করার কারণে পাকি পশু হত্যা করে অমল সোম এবং ওয়ালিয়ার রহমান পারুকে


শুধু নাটক করার কারণে পাকি পশু হত্যা করে অমল সোম এবং ওয়ালিয়ার রহমান পারুকে। যশোর ইন্সটিটিউটের নাট্য বিভাগ এক সময় ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালে যশোর ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তারা যেন দিব্য দৃষ্টিতে দেখতে পেয়েছিল আগামীর ইতিহাস। তাই একুশ উদযাপিত হয়েছিল স্বাধীনতার আহবান জানিয়ে।

নাট্যকলা সংসদ মঞ্চস্থ করল স্বাধীনতার আগমনী গান ‘মা’ নাটক। ওই সময় আলমগীর সিদ্দিকী ছিলেন ক্রীড়া বিভাগের সম্পাদক। তাঁর উৎসাহে এই নাটকটি রচনা করেন ইন্সটিটিউটের অন্যতম সংগঠক মাহমুদ-উল-হক। এই নাটকে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষনা করা হয়েছিল।

সেই সময় এই নাটক ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছিল। এই নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন স্বপ্না বিশ্বাস। অন্যান্য চরিত্রে রুপারোপ করেন অমল সোম, ওয়ালিয়ার রহমান পারু, পরিতোষ রায়, অমল মজুমদার, অজিত ঘোষ(মন্টু) ভূপতিমোহন চন্দ্র, সুলতান মাহমুদ, নয়ন চৌধুরী প্রমুখ।

এই নাটকে অভিনয় করার অপরাধে ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ জিলা স্কুলের সামনে থেকে অমল সোমকে ধরে নিয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনী। তাঁর বাড়ি ছিল শহরের ষষ্টিতলায়। ধরে নিয়ে যাবার সময় পাক হানারদার বাহিনী বলেছিল-‘ তোম নাটক করতা হ্যায়। চলো নাটককে লিয়ে তুমহারা জরুরত হ্যায়।’

অমল সোমের বাড়ি ছিল বরিশাল। পিতার চাকরি সূত্রে যশোরে আসেন। তিনি বহু নাটকে অভিনয় করেছেন। এরমধ্যে অন্যতম ‘বিজয়া-১৯৫৯), ‘ক্ষুধা’, ‘আজকাল’, ‘কালো অধ্যায়’, ‘কাঞ্চন রঙ্গ’, ‘অগ্নিবীনা’, ‘এই পৃথিবীর বুকে’, ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ’, ‘বারো ঘন্টা’, ‘কেদার নাথ’, ‘বাস্তুহারা’, ‘মাইকেল’, ‘শাজাহান’, ‘অবিচার’, ‘অগ্নিগিরি’, ‘বিশ বছর আগে’, ‘ব্লাক মার্কেট’, ‘পরিণতি’, ‘মুক্তি’, ‘নূপুরের মন’, ‘পারগেটিভ’, ‘প্রদীপ শিখা’, ‘শেষ দেখা’, ‘দায়ী কে’, ‘তাইতো’, ‘ছেড়া তার’, ছাড়াও আরও অনেক।

অন্য দিকে ওয়ালিয়ার রহমানকে পাকিস্তানি পশু বাহিনী হত্যা করে যখন মুক্তিবাহিনীর বিজয় অত্যাসন্ন। তাঁর বাড়ি ছিল শহরের পুরাতন কসবা। কর্ম জীবনে তিনি ঢাকা সেক্রেটারিয়েটে চাকরি করেছেন। পরবর্তীতে তিনি ওই চাকরি ছেড়ে যশোর কারেক্টরেটে চাকরি নেন।

পুরাতন কসবা অগ্রদূত ক্লাবের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ওই সময় তিনি বহু নাটকে অভিনয় করেছেন। পরবর্তীতে তিনি ‘ডায়মন্ড ক্লাব ‘ ও যশোর ইন্সটিটিউটের নাটক বিভাগের অনেক নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৭১ সালের তিনি এবং তাঁর অনুজ ওহিদুর রহমান চারুসহ শহীদ হন। তাঁদেরকে স্মরণ করি। এই শহরের অনেকে তাঁদের কথা ভুলে গেছেন।

Post a Comment

0 Comments